নিজস্ব প্রতিবেদক:
রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া বাদল ও তার দুই সঙ্গীকে অপহরণ করার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবার (২৪ অক্টোবর) বেলা পৌনে ৩টার দিকে একটি মাইক্রোবাসে করে তুলে নেওয়া হয়। পরে রাত আড়াইটার দিকে তাদের আশুলিয়া এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে তারা বাসায় ফিরে এসেছেন।
ফিরে আসার পর শফিকুর রহমান ভূঁইয়া বাদল নিজেই এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, তার সঙ্গে অপহৃত অন্য দু’জন হলেন শাকিল ভূঁইয়া (২০) ও শাকিল মিয়া (২২)। বুধবার দুপুরে তারা ইউনিয়ন পরিষদের রিলিফের চাউল বিতরণ করছিলেন। এসময় নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীকের উন্নয়নমূলক লিফলেট বিতরণ করছিলেন শাকিল ভূঁইয়া ও শাকিল মিয়া। আনুমানিক বেলা পৌনে ৩টার দিকে কায়েতপাড়া বড়ালু পাড়াগাঁও এলাকার খানকাহ শরীফের সামনে থেকে অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজন একটি সাদা মাইক্রোবাস ও দু’টি মটরসাইকেলে তাদের সামনে এসে দাঁড়ায় এবং তাদের মাইক্রোবাসে তুলে নেয়।
অপহরণকারীদের কাউকে চিনতে পেরেছেন কি না— জানতে চাইলে বাদল বলেন, ‘আমি কাউকে চিনতে পারিনি। তারা মাইক্রোবাসে তুলেই আমার চোখ ও মুখ বেঁধে ফেলে। এরপর তারা কোথায় নিয়ে গিয়েছে, সেটা বলতে পারি না। তবে অপহরণকারীরা বারবার একজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিল। তখন তারা ফোনের অন্য প্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে মামা বলে সম্বোধন করছিল। আর সেই মামা বারবার আমাদের ফেলে দেওয়ার কথা বলছিলেন।’ তবে অপহরণকারীদের দলে মোট ৯ জন ছিল বলে জানিয়েছেন বাদল।
অপহরণের পর মারধর করা হয়েছে জানিয়ে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আরও বলেন, যেভাবে আমাকে মেরেছে, কোনো পশুকেও মানুষ এভাবে মারে না। আমাকে বলা হয়, গোলাম দস্তগীর গাজীর নির্বাচন করবি? হাত-পা না থাকলে কীভাবে নির্বাচন করবি?
বাদল জানান, গভীর রাত পর্যন্ত তাদের একটি ঘরে আটকে রেখেছিল। পরে আবার গাড়িতে তুলে নেয় এবং কালেমা পড়তে বলে। এরপর আশুলিয়া এলাকায় তারা চলন্ত গাড়ি থেকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। তখন রাত আনুমানিক আড়াইটা বাজে। এরপর তিনি হাঁটতে হাঁটতে সাভার বাজারে যান। সাভার বাজার থেকে কয়েকজন মানুষের সহযোগিতা নিয়ে গুলিস্তানের গাড়িতে ওঠেন। সেখান থেকে সকালে বাসায় ফেরেন।
বাদলসহ অপহৃত তিন জন উদ্ধার হওয়ায় স্বস্তি জানিয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা যুবগলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শাহিন বলেন, আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া। আল্লাহ আমাদের ভাইকে নতুন জীবন দান করেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের রূপগঞ্জে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। এখানে গোলাম দস্তগীর গাজীর নেতৃত্বে আঘাত হানতে একটি কুচক্রী মহল তাকে অপহরণ করতে পারে। তবে আমরা যখন তাদেরকে পেয়েছি, অবশ্যই এই ঘটনার পুরো রহস্য উৎঘাটন হবে।
এদিকে, অপহরণের ঘটনায় গতকাল বিকেলে রূপগঞ্জের ভুলতা, কাঞ্চন এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানায় এলাকাবাসী। এলাকার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ এলাকার সাধারণ মানুষও অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেয়।
শাকিল বলেন, পাড়াগাঁও মহিউদ্দিন মেম্বারের বাড়ি থেকে মেশিন কপালে ঠেকিয়ে গাড়িতে তুলে নেয়। মাথায় কালো কাপড় দিয়ে বান দেয়। ওদের সাথে একটা যুবতী মহিলা ছিলো । আমাদের দাড় করে রাখে। আমাদের ৩য় এবং ২য় তলায় রাখা হয়েছিলো। একজনের চুল অনেক বড় ছিলো। আমার কাছে থাকা ২৬ হাজার টাকা ছিলো সে টাকা ওরা নিয়ে নেয়। আর বলে নো টক নো টক বলে গুলি করার কথা বলে। ৩ টা গাড়ি দিয়ে আমার গাড়িটা নিয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, বাদলের বাবা হাবিবুর রহমান কায়েতপাড়া ইউনিয়নের দুই বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। তার দাদা আয়াত আলী ভূঁইয়াও ছিলেন তিন বারের ইউপি চেয়ারম্যান।